তাকবীরে তাশরীক এর ফজিলত।

 তাকবীরে তাশরীক এর ফজিলত ও গুরুত্ব।



তাকবীরে তাশরীক এর ফজিলত?

তাকবীর (تكبير) অর্থ হলো- বড়ত্ব ঘোষণা করা। আর তাশরীক (التشريق) অর্থ হলো- সূর্যের তাপে গোশত শুকানো।

তাকবীরে তাশরীক تكبير التشريق এর অর্থ -সূর্যের তাপে গোশত শুকানোর বড়ত্ব ঘোষণা করা। আরবগণ তাদের কুরবানীর গোশত ঈদের তিনদিন পর পর্যন্ত রোদে শুকাতো, এজন্য এ দিনগুলো আইয়ামে তাশরীক বলা হয়।

তাকবীরে তাশরীক -

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْد

‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’- বাক্য বলা।

আইয়ামে তাশরীক কেনো গুরুত্বপূর্ন?

মুসলমানগণ প্রতি বছর আইয়ামে তাশরীকের ০৫ দিন (৯ জিলহজ তারিখের ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজ সালাতুল আসর পর্যন্ত) ইবরাহীম আ. এর বরকতময় স্মৃতিচারণ করে থাকে তাকবীরে তাশরীক পাঠের মাধ্যমে। তাকবীরে তাশরীক পাঠের মাধ্যমে মুসলমানদের মাঝে সেই চেতনা কাজ করে। অতএব ইবরাহীম আ. ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল আ. এর স্মৃতিবিজড়িত ‘তাকবীরে তাশরীক’ ইসলামে শরীয়তে বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।

তাকবীরে তাশরীক হলো তাকবীর, তাহলীল, তাহমীদের সমন্বিত রূপ

তাকবীরে তাশরীক হলো কয়েকটি বিশেষ বাক্যের সমন্বিত রূপ। এতে রয়েছে ০৪ বার তাকবীর, ০১ বার তাহলীল এবং ০১ বার তাহমীদ। তাকবীরে তাশরীকের এ উপাদানগুলো অত্যন্ত ফযিলতের। নিম্নে এর উপাদান গুলোর ফযিলত তুলে ধরা হলো-

ক) তাকবীরের ফযিলত

তাকবীর হলো আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণা করা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার আদেশ প্রদান করে বলেন- আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত নং- ০৩)

‘আল্লাহু আকবার’ আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রিয় বাক্যসমূহের মধ্যে অন্যতম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- চারটি বাক্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। তা হলো- সুবহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এবং আল্লাহু আকবার। এছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে তাকবীরের গুরুত্ব ও ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।


খ) তাহলীলের ফযিলত

তাহলীল তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাওহীদের বাণী। তাহলীলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের ঘোষণা হয়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা ইসলামের শাখাসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এসেছে- ঈমানের ৭০ এর অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনিম্ন হচ্ছে- রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৬২)


গ) তাহমীদের ফযিলত

তাহমীদ হলো আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও স্তুতি জ্ঞাপন করা। আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করলে তিনি বান্দার উপর নিয়ামতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তায়ালা প্রশংসাজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে আলহামদুলিল্লাহ বলার অগণিত সওয়াব বর্ণিত আছে। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে- আলহামদুলিল্লাহ নেকীর পাল্লাকে পরিপূর্ণ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৫৬) অতএব তাহমীদ তথা আলহামদুলিল্লাহ বলা অত্যন্ত ফযিলতের একটি আমল।


উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান- তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ সমন্বিত ‘তাকবীরে তাশরীক’ অত্যন্ত গুরুত্ব ও ফযিলতের একটি আমল।


‘তাকবীরে তাশরীক’ সম্পর্কিত মাসয়ালা-মাসায়েল

০৯ জিলহজ ফজর হতে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরক্ষণেই অনতিবিলম্বে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব।

উক্ত দিনসমূহে প্রত্যেক ফরয নামাযের পর প্রত্যেক মুসলমান, চাই সে গোলাম হোক, কিংবা স্বাধীন হোক, মুসাফির হোক, কিংবা মুকীম হোক, একাকী আদায়কারী হোক কিংবা জামায়াতে আদায়কারী হোক- সবার জন্য তাকবীরে তাশরীক ওয়াজিব।

পুরুষগণ তাকবীরে তাশরীক জোরে বলবে।

মহিলাগণ তাকবীরে তাশরীক আস্তে বলবে।

মাসবুক ব্যক্তি(যে শুরু থেকে ইমামের অনুসরণ করতে পারেনি।) নিজ নামায শেষ করার পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাকবীরে তাশরীক যথাযথভা

বে পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমীন


লেখক 

মাওঃ মোঃ আল আমিন মিয়া 

কামিল, হাদিস, ইসলামিক স্টাডিজ 

ইসলামিক আলোচক, ইসলামিক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সোসাল মিডিয়া।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url